সবসময় ভাবি রাস্তায় যদি একটা টাকার বস্তা কুড়িয়ে পেতাম। তবে টাকার বস্তা না পাওয়া হলেও একবার এক মানি ব্যাগ পেয়েছিলাম। ৭৫৭০ টাকা ভর্তি ব্যাগ। লোভ হয়েছিলো তবে ফেরত দিয়ে দিয়েছিলাম। স্যার বলতেন সততার একটা ক্লাস থাকে কেউ ২০ টাকায় বিক্রি হয় কেউ ২ হাজার টাকায়। তবে নির্লোভী মানুষ যে নেই তা নয়। ২০০০ কোটি টাকা পেলেও তারা ফেরত দিয়ে দেবে। আমি সেদিন থেকেই ভাবছি আমি কত টাকায় সততা হারাবো? সম্ভবত এক বস্তা টাকা হলেই হবে। সেদিন থেকেই এক বস্তা টাকার অপেক্ষায় আছি। ভাবতে ভাবতেই ব্রেক করলো ফয়সাল। ফয়সাল বলল মিন্টু ভাই সামনে একটা ভরা ব্যাগ। আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। অবাক হল ফয়সাল।
ব্যাগটা নিয়ে বাইক টান দিলাম। নিরিবিলি একটা স্থানে দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরালাম। ফয়সাল বলল
- ভাই মনে হওছে মেলা টাকা আছে এটি
- ঠিকি বুলিছু ভাই। এবার দুভাই বড়লোক হয়ে যামু
- হু। চলেন খুলি।
- অবশ্যই।
ব্যাগ খুলে সব আশায় গুড়া বালি ব্যাগে কোনো টাকা নেই যা আছে তা চিনতেও সময় লাগলে কিছু। গাজা। সম্ভবত পুলিশের তারা খেয়ে কোনো গাঁজা ব্যবসায়ী ব্যাগ ভর্তি গাঁজা ফেলে রেখে গেছে। হাত দিয়ে উঁচু করে ওজন আইডিয়া করলাম ৭-৮ কেজির কম হবে না। সিগারেট ধরিয়ে টানতে লাগলাম। ফয়সাল কে বললাম ভাই গাড়ি স্ট্রার্ট দে। ব্যাগ রেখে চলে যাবো। ফয়সাল বলল ভাই গাঁজার কেজি কতো জানেন? বলল কত হবে? ফয়সাল বললো কমছে কম ৩০ হাজার মানে প্রায় আড়াই লাখ টাকার গাজা এখানে।
আমি বলল যাই হোক চল ভাই ধরা খেলে ** মারা। ফয়সাল বলল তাও কথা। কিন্তু ভাই।
কিছু ভাবতে না ভাবতেই চারপাশ থেকে আলো এসে আমাদের ঘিরে ফেললো। পুলিশ এসে বলল
কি ভাবিছিলু ধরা খাবু না? এবার বুজবু কত ধানে কত চাল।
মান্দা থানার একটা রুমে আটকে রাখলো আমাদের। অনেকবার বললাম ভাই আমরা ব্যাগ পরে পেয়েছি । তারা কোনো ভাবেই মানলো না। ফয়সাল দু তিনটে চর থাপ্পড় ও খেয়েছে বেশি কথা বলার অপরাধে। আমি চুপ। এক ঘণ্টা আগেও কত স্বপ্ন ছিলো আগামী দিন নিয়ে। আর আগামীকাল কিনা থাকতে হবে জেলে।
কোর্টে তুলে দ্বিতীয় বার ছবি তুলল। প্রথম বার মান্দা থানায় তুলেছিলো সাংবাদিকরা। পুরো এলাকায় হয়তোবা আমাদের ধরা খাওয়ার খবর পৌঁছে গেছে। কি যে লজ্জা লাগছে ইচ্ছে করছে মাটি ফাঁক হোক ভিতরে ঢুকে যাই। ফয়সাল আর আমাকে অন্যান্য আসামীদের সাথে নিয়ে যাওয়া হলো জেলে।
একটা রুমের মধ্যে ঢুকে আটকে দেওয়া হলো। পাশে যেই লোক গুলো আছে তাদের মধ্যে যারা নেশাখোর তারা দীর্ঘক্ষণ নেশার ছাড়া থেকে পানি ছাড়া মাছের মতো করছে। আমি নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করলাম। পাশ থেকে একজন বলল কি কেসে আসিছেন ভাই? ফয়সাল বলল মিথ্যা কেস ভাই। সবাই হা হা করে হাসতে লাগলো। ফয়সাল চুপ হয়ে গেলো। আমি বললাম। হাসোছেন কেন ভাই? একজন বলল সবাই এমন ই বুলে মিছাই ধরে আনছে। খবর তো পাউছি গাজা নিয়া ধরা খাউছেন? গাঁজার ডিলার।
ওদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য কথায় মন না দিয়ে মশা মারায় মন দিলাম।
সকালে ঘুম থেকে তুলল খুব সকালে। লম্বা সিরিয়াল ধরে টয়লেট কাজ ছাড়লাম। রাতের অখাদ্যের কথা টয়লেটে বসেও খুব মনে পড়ছিল এবং চোখ দিয়ে পড়ছিল পানি। তবে এই পানির কোন মূল্য এখানে নেই। বাহিরে কতশত সহানুভূতি পেতাম আর এখানে সহানুভূতি বলতে কোন শব্দই হয়তো নেই।
জেল সেলুনে যেয়ে হারালাম চুল। আয়নায় নিজেকে চিনতে খুব কষ্ট হলো। কপালের উপরে এক মিলি মিটার চুলও আস্ত রাখলো না। ফয়সাল ওর স্টাইলিশ চুল হারিয়ে সেকি কান্না। এলাকার পরিচিত বিধান দাদাকে এক প্যাকেট সিগারেট দিবে বলেও মিললো না চুলের এক মিলি মিটার ছাড়।
ফ্যামিলি টাইমে মাথা নিচু করে শিকের ওপারে চেয়ে রইলাম। কেউ দেখতে আসেনি আমাকে। ফয়সালের বাবা এসেছে আর ভাই এসেছে। ফয়সাল চিৎকার করে বলল আব্বা আল্লাহর কসম হামরা কিছুই করি নাইকো। হামাগের ছেড়ে দিতে বুলেন। হামরা এটি বাঁচবার লয়।
দেখতে দেখতে মাস খানেক চলে গেলো। জেলের নিয়মকানুন প্রায় মুখস্থ হয়ে গেছে। এখন আর বলি না মিথ্যা কেসে ফেঁসে গেছি। বলি এক ট্রাক গাজা নিয়ে ধরা খেয়েছি। নতুনরা বিশ্বাস করে ভয় পায় আমাদের। পুরাতন না উপভোগ করে জেলের রসিকতা।
শ্যাম্পু এক্সপ্রে করে গায়ে মেখে মশার হাত থেকে বাচি। একবার এক সাঁওতাল গ্রুপ কে তো ভয় পাইয়ে দিয়েছিলাম। বলেছিলাম মশা মারবিন না। মশার চাষ হয় নওগাঁ জেল খানায়। মশার কামড় হল আসামীদের কমন শাস্তি। প্রথম প্রথম খুব সিগারেট খেতাম এখন মায়া বিরি ছাড়া খুব একটা খাইনা। সিগারেট খাওয়ার মতো অর্থ বাসা থেকে কিভাবে দেবে। খুব লজ্জা লাগে আমার নিজের বাবা যখন আমার জন্য বিরি নিয়ে আসে। কি করবো এটা জেল। লুকানোর কিচ্ছু নেই ।
ভাবি লোভের অনেক সাজা পেয়েছি। আর কখনো লোভ করবো না। জেল বন্ধুরা আবার মনে কু প্রচারণা দেয় দোষ না করেই যে দেশে দোষী সেখানে পাপ করেই জীবন চালাতে হবে
ফয়সাল এখন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পরে। মুয়াজ্জীনের দায়িত্ব সে নিজের কাঁধে নিয়েছে। পরিচিত হয়েছে অনেক নতুন আসামি দের সাথে।
বাবু এসেছে অপহরণ কেসে। ঢাকার ছেলে। প্রেমের টানে প্রেমিকাকে নিয়ে পালানোর সময় প্রেমিকার বাবার মামলায় নওগাঁ জেলে। হামিদ ভাই খেয়েছে জমি জমা নিয়ে মামলা। মহসিন ভাইকে তার পরিবারই জেলে পাঠিয়েছে সিস্টেমে নেশা ছাড়ার জন্য। মাস্টার সাহেব এর কেস টা ধর্ষণ হলেও সে বলে সে খুন করেছে। তার কেসে টা আমার কাছে সব চেয়ে রহস্যময় লাগে।
আমার এলাকার এক ভাই নেশাখোর।। নেশা সহ ধরা খেয়েছে। আগে কখনো তার সাথে মেশা হয়নি। এখন সম্পর্ক খুব নিবিড় । হিরোয়িন ছাড়া চলতে না পারা মাসুদ ভাই সিগারেটে ভুলেও টান দেয় না এখন।
অপেক্ষায় আছি কবে এই জীবন থেকে মুক্তি পাবো। দেখবো মুক্ত আকাশে একটি নতুন সূর্য । ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
বিনা দোষে নাকি লোভে কি কারনে বন্ধী হতে হয়েছিলো বিচার পাঠক করবে। বন্ধী অবস্থা থেকে মুক্তি অবশ্যই একটি নতুন সূর্যের সাথে একটি নতুন সকালের সাথে সামঞ্জস্যতা রাখে।
২৮ জুন - ২০২৩
গল্প/কবিতা:
৪ টি
সমন্বিত স্কোর
৫.৬
বিচারক স্কোরঃ ২.৭১ / ৭.০পাঠক স্কোরঃ ২.৮৯ / ৩.০
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।